সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অজানা গন্তব্যে দিশেহারা নেতানিয়াহু

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ | প্রিন্ট

অজানা গন্তব্যে দিশেহারা নেতানিয়াহু

হামাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। এখন তিনি কী করবেন তা নির্ণয় করা তার নিজের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে নেয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। যদিও প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে পূর্বপরিকল্পিত রাফায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। হামাসের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পড়িছেন কঠিন পরিস্থিতিতে। এখন তিনি কী করবেন তা নির্ণয় করা তার নিজের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে বেশ পছন্দ করতেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারে লিকুদ পার্টির প্রধান কার্যালয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের পাশাপাশি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নেতানিয়াহুর ছবি সম্বলিত বিশাল ব্যানার শোভা পেয়েছিল।

ইসরাইলিদের কাছে পুতিন এখন এক আতঙ্কের নাম। রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নেতানিয়াহুও নতুন একটি ক্লাবে যোগ দিতে পারেন। যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ গতবছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বর্বর আগ্রাসন, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে আইসিসি।

সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবরে নেতানিয়াহু এতটাই উদ্বিগ্ন যে, গত ৩০ এপ্রিল অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, যদি ইসরাইলের শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তবে এটি ‘ঐতিহাসিক পর্যায়ের একটি কেলেঙ্কারি’ হবে।

আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানার ঝুঁকিতে থাকা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিষয়ে ইসরাইলি নীতির বিপক্ষে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেতানিয়াহু। গাজা উপত্যকার দক্ষিণ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় একটি পরিকল্পিত স্থল হামলা বিলম্বিত করেছেন। যদিও এরই মধ্যে রাফায় ইসরাইলি বাহিনী সীমিত আকারে স্থল অভিযান শুরু করেছে।

মঙ্গলবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা গাজা উপত্যকা এবং মিশরের মধ্যবর্তী রাফা ক্রসিংয়ের গাজা অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বিমান হামলা চালানোর একদিন আগে অন্তত এক লাখ ফিলিস্তিনিকে অঞ্চলটি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসরাইলের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ মনে করেন, হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইসরাইল রাফা আক্রমণের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। অনেকে জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানো পর্যন্ত সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে। অপরদিকে হামাসের কাছে যেসব জিম্মি রয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন যেন হামাসের সঙ্গে নেতানিয়াহু চুক্তি করেন এবং তাদের স্বজনদের মুক্ত করে আনেন।

গত সোমবার (৬ মে) রাতে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে হঠাৎ রাজি হওয়ার ঘোষণা দেয় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তাদের এ ঘোষণা ইসরাইলের জন্য বড় ‘চমক’ ছিল। কারণ তারা ভাবতেও পারেনি হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার ঘোষণা দেবে।

হামাস যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার অপ্রত্যাশিত ঘোষণা দেওয়ার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ানি নেতানিয়াহু কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে দেখে মনে হচ্ছে গাজার ঘটনা এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনাগুলোর উপর তার নিয়ন্ত্রণ কম। নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে আবদ্ধ। কারণ বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন যে জোট সরকার রয়েছে সেটি ইহুদি উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

ইসরাইল কয়েক মাস ধরেই হামাসের শেষ প্রধান ঘাঁটি রাফায় সেনা অভিযানের হুমকি দিয়ে আসছে। ইসরাইলের হামলা থেকে বাঁচতে গত সাত মাসে মিশরের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ শহর রাফাতে গাজার ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কয়েকমাস ধরে হুমকি দিয়ে এলেও মূলত দুটি প্রধান কারণে রাফায় চূড়ান্ত অভিযানে বিলম্ব করেছে ইসরাইল। প্রথমটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরাইলের ওপর তীব্র চাপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন রাফায় অভিযানের বিষয়ে নেতানিয়াহুকে সতর্কভাবে এগোনোর আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসন রাফা নিয়ে ইসরাইলের পরিকল্পনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেছে এবং বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই।

দ্বিতীয় কারণটি হলো ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তির সম্ভাবনা। চুক্তি কার্যকর হলে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলি জিম্মিদের একটি বড় চালান মুক্তি পাবে। এরইমধ্যে হামাস বলেছে, তারা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদেরকে জানিয়েছে যে ইসরাইলের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তারা। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, গোটা বিষয়টিই এখন ইসরাইলের হাতে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের গৃহীত প্রস্তাবটি ‘ইসরাইলের মৌলিক শর্তগুলো থেকে অনেক দূরে’, তবে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এর আগে রাফা শহরের কিছু অংশ খালি করার জন্য ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করার পর ইসরাইল সেখানে বিমান হামলা চালায়।

হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর নেতানিয়াহু সরকার দ্বিধাবিভক্ত। বর্তমানে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যে জোট সরকার রয়েছে সেটি ইহুদি উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে উগ্রপন্থি জাতীয়তাবাদী দলগুলো হুমকি দিয়েছে, যদি রাফায় হামলা করা ছাড়া নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় তাহলে তারা সরকার ভেঙে দেবে।

ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগভির বলেছেন, ইসরাইল যদি প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নেয় তাহলে তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন।

দখলদার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োহাভ গ্যালান্ট বলেছেন, যদি হামাস তাদের শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয় তাহলে রাফাসহ গাজার সব জায়গায় তীব্র হামলা চালানো হবে।

নেতানিয়াহু ইহুদি উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলো নিয়ে বেশি চিন্তিত। কারণ তাদের সমর্থন হারালে তার সরকারের পতন ঘটতে পারে। বিপরীতে তাদের দাবি মেনে নিলে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালত পুতিনের মতো নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।

যদিও আইসিসি প্রতিষ্ঠার রোম সনদে সই করেনি ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো তারাও এর প্রাতিষ্ঠানিক কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না।স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইলের ভূমিকা নিয়ে কোনো তদন্ত চালাতে পারে না সংস্থাটি। সদস্যভুক্ত দেশের ওপরই শুধু এর কর্তৃত্ব রয়েছে। তাই সদস্য রাষ্ট্রে কোনো অপরাধ ঘটলেও সংস্থাটি তদন্তকাজ চালাতে পারে।

তবে ২০১৫ সালে ফিলিস্তিন এই সংস্থাটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। সেই অনুযায়ী, গাজা বা পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা কিংবা নেতৃত্বকে অভিযুক্ত করে অপরাধ তদন্ত করার পাশাপাশি যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধেই পরোয়ানা জারির ক্ষমতা রাখে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনও আইসিসিকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে গত বছর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে মনে করা হয়।

আইসিসির সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বারস্থ হয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে টেলিফোনও করেছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর আশা-মার্কিন চাপে ইসরাইলের শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠবেন আইসিসির কর্তা ব্যক্তিরা।সূ

সূত্র: ইকোনমিস্টের নিবন্ধ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:০৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৮ মে ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(237 বার পঠিত)
(204 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]